বিদেশিরা মাসে ১২-১৫ লাখ বেতন পেলেও বাংলাদেশে কোচরা না খেয়ে মরে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওই স্ট্যাটাসে মাশরাফি কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে আঙুল তুলেছেন। মাশরাফি বলেন, কোচ নিয়োগের সময় যে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়, সেখানে আসলে তাকে কি প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌ কি করা হয় কোনো প্রশ্ন? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয়, ‘তোমার কি করার ইচ্ছা?’ হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে। ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করা হয়, ‘দারুণ কোচ, কী সুন্দর পরিকল্পনা, এর মতো কোচই হয় না। ‘আমার তো মনে হয়, ভুল ওখানেই হয়ে যায়।
কারণ, মানুষকে বোঝাতে আমরা সব সময় হাই প্রোফাইল কোচ খুঁজি, যা পরে আর কোনো কাজে আসে না।’ তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন, আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিম্যাম খেলোয়ারকে নিয়ে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে (এরকম কোচ)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা নিয়ে আসা। তা না হলে তো সে বুঝবেই না, একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কত দিন লেগেছে, বা অতীতে তাদের অবদান কী, একজন মুস্তাফিজ কীভাবে উঠে এসেছে। ‘বারবার বলেছি, আবারও বলছি, দলের আগে কখনোই কোন খেলোয়াড় হতে পারে না। ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে। অফ ফর্ম সব খেলোয়াড়ের জীবনেই যায়। বাদও পড়ে।
কিন্তু ম্যানেজমেন্ট থেকে অপমানিত শুধু আমাদের দেশেই বেশি হয়।’ মাশরাফি আরও বলেন, পারর্ফম না করলে বাদ দেবেন স্বাভাবিক। আবার তাকে তো সহযোগিতা করতে হবে, কীভাবে ফর্মে আনা যায় বা তাকে মেন্টালি কীভাবে সাপোর্ট করা যায়। কোনোভাবেই আপনি বুঝতে দিতে পারেন না যে, আপনি তাকে আর আপনার সময়কালে দেখতে চান না। এটার কারণ একটাই, কোনো কোচই আমাদের দেশে কাজ করার আগে আমাদের দেশের ক্রিকেটের ফলোয়ার থাকে না। চাকরির জন্য আসে, শেষ হলে চলে যায়। এ যাবৎকালে প্রায় ৯/১০ জন কোচের সাথে কাজ করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক।
কারণ একেকজনের কাজের ধরন একেকরকম। কিন্তু সব সময় দেখেছি, প্রত্যেক কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়। পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্য কেউ তাকে আর কিছুই বুঝাতে পারে না। বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে। ‘ওই পছন্দের জন্য সে আবার দুজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে, তাদের আর দেখতেই পারে না। এক পর্যায়ে এমন জিদ শুরু করে যে, প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেব, এমন কথা প্রকাশ্যেও শুনেছি কয়েকবার কোচের মুখে।’ নড়াইল এক্সপ্রেসের মতে, কোচের পছন্দ কিছু খেলোয়াড় হতেই পারে। সেটা সব কোচেরই হয়। অনান্য দেশেও হয়। তবে সেখানে কখনও সেটা প্রকাশ্যে বুঝতে দেয় না, অনুমান করতে হয়। কারণ দলের সেরা ৩/৪ জন খেলোয়াড়ই শুধু ম্যাচ জেতায় না। জেতালেও আপনি একজনের জন্য আরেকজনকে ছোট করতে পারেন না। তিনি বলেন, দর্শক বা সাংবাদিক অনেক কিছু লিখতেও পারে, বলতেও পারে। যেটা একদম নরম্যাল ব্যাপার।
কোচকে বলা হয় ফাদার অফ দ্যা সাইড। সে সবাইকে দেখে রাখবে, প্রয়োজনে কঠোর হবে। আবার দলের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করবে। তার সব কিছুই হতে হবে পজিটিভ। কারও প্রতি কঠোর, কারও প্রতি নমনীয়, এটা এক রকমের বৈষম্যতে রূপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে। ‘এক পর্যায়ে তারা (বিদেশি কোচরা) নিজেদের দেশে, না হলে আই পি এল বা আরও ভালো কোনো অফার পেয়ে চলে যাবে। কারণ এত দিনে সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে, নিজের প্রোফাইলও ভারি করেছে।
বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২/১৫ লাখ টাকা আর আমাদের কোচরা না খেয়ে মরে। গালিও দেখি আমাদের কোচরাই হজম করে। পরে উনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে। আবার নতুন কোচ, নতুন পরীক্ষা, নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া-আসা। তাই আমার মনে হয়, হাই প্রোফাইল কোচ নয়, আমাদের প্রয়োজন আমাদের কোচ, বাংলাদেশের কোচ।’